অনেকদিন চিলেকোঠার ঘরটা পরিষ্কার করা হয় না
তাই বছরের প্রথম দিনে ‘স্বচ্ছ অভিযানে’ যোগ দিলাম
নাকে, মুখে কাপড় ঢেকে দরজাটা খুলেই দেখি
ঘরটা আরশোলা, টিকটিকি আর মাকড়শার দখলে
ঝাড়ু, ঝাড়ন আর কীটনাশক নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরলাম সমরে
ঘর বোঝাই একরাশ আবর্জনা
কোনটা ফেলব আর কোনটা রাখব
তাই ঠিক করতে পারছি না।
ওই যে মায়ের প্রিয় পেতলের কলশীটা
এককালে জল ভরা থাকত,
আজকের আধুনিক যুগে ওর স্থান নিয়েছে
এক অত্যাধুনিক যন্ত্র - ‘ওয়াটার পিউরিফাইয়ার'
আর এক কোনায় শিলনোড়াটা
মনে মনে ‘মিক্সার গ্রাইন্দার’ কে গালমন্দ করছে
আর বাবার ট্রাংকটা, কেমন মুখ কালো করে বসে আছে
এযুগের ‘স্ত্রলি ব্যাগের’ তুলনায় ওঁর ভার বোধহয় অনেক বেশী।
ঠিক করলাম এটাকেই প্রথমে বিদেয় করব
ছোটবেলায় ওই ট্রাংকটা ধরা নিষিদ্ধ ছিল
কৌতূহল হল, দেখিই না কি আছে
খুলে দেখি বাক্স বোঝাই পুড়নো চিঠি
হালকা নীল রঙের ‘ইংল্যান্ড লেটার’ আর
হলদে রঙের 'পোস্ট কার্ড’
সময়ের সাথে সাথে কেমন রঙ পালটেছে।
‘ওআটসঅ্যাপ' আর ‘ফেসবুকের' যুগে
এগুলো তো লুপ্ত সম্পদ
মনে হল - চিঠিগুলো পড়ে দেখলে কেমন হয়
বাবার সযত্নে রাখা চিঠিগুলো পড়তে শুরু করলাম
বেশীর ভাগ চিঠি দেশ ভাগের সময়ে দাদুর হাতের লেখা,
একটায় লেখা, “কাল তোমার পত্র পাইলাম,
শুনিয়া আশ্বস্ত হইলাম যে তুমি সুস্থ আছ”
অন্যটায় লেখা, “এখানে দুষ্কর্মীদের উৎপাত ক্রমশ ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে,
হয়ত খুব শীঘ্র দেশ ছেড়ে পলায়ন করতে হবে”
কোথাও চিন্তা, “তোমার ছোট ভাইদের শহরে পাঠালাম,
দেখিয়া শুনিয়া রেখো”
কোথাও কষ্ট, “আগামী মাসে পঞ্চাশ টাকা বেশী পাঠিয়ো,
তোমার মার হাঁপানির টানটা খুব বেড়েছে,
ডাক্তার দেখাতে হবে।"
কোথাও উদ্বেগ, “প্রাপ্ত বয়সী মেয়েকে নিয়ে
এখানে থাকা অত্যন্ত বিপজ্জনক”
আঁতকে উঠলাম, এ কি পড়ছি আমি
ছোটবেলা থেকে উদ্বাস্তু কথার অর্থ জানতাম
কিন্তু উপলব্ধি আজ প্রথম হল।
আড় চোখে দেখি পেতলের গেলাস থেকে
একটি আরশোলা উঁকি মারছে
কিন্তু আর ওদের উচ্ছেদ করতে মন চাইল না
তাই চিঠিগুলো বাক্সে রেখে চলে এলাম।